সর্বশেষ

রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২০

শেষ হোক নিষ্ঠুরতম মাস

শেষ হোক নিষ্ঠুরতম মাস


কেন যেন বারবার টি এস এলিয়টের কবিতার লাইনটা মনে পড়ছে, ‘এপ্রিল ইজ দ্য ক্রুয়েলেস্ট মান্থ...।’ এপ্রিল মাসের প্রথম দিনই বাবাকে হারিয়েছি। করোনাভাইরাসে মারা যাননি বাবা। বয়স হয়েছিল, বার্ধক্যে মারা গেছেন। এমনিতেই এপ্রিলের প্রথম দিনে এত বড় শোক, তার ওপর করোনাভাইরাসের কারণে এই মাসটিকে জীবনের সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম মাস বলে মনে হচ্ছে। চারদিকে মৃত্যুর মিছিল।

গত ৫ মার্চ নিউজিল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় খেলা শেষ করে দেশে ফিরেছি। তখন করোনাভাইরাসের প্রভাব বেশি ছিল চীনে। দেশে আসার পরপরই আমি এবং আমার স্ত্রী হোম কোয়ারেন্টিনে ঢুকে যাই। তখন থেকেই খবর পাচ্ছিলাম একের পর এক খেলা স্থগিত, না হয় বাতিল হচ্ছে। বিশেষ অনুশীলনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা ছিল ১২ মার্চ। সেখান থেকে কানাডায় গিয়ে আমার মনস্তাত্ত্বিক কোচ আলী খানের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। কিন্তু তত দিনে যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউন শুরু হয়ে গেছে। উনি আমাকে বললেন পরিস্থিতি দেখতে। এরপর দেখি সারা পৃথিবীই লকডাউন! ভাগ্য ভালো শেষ পর্যন্ত যেতে পারিনি। তত দিনে বিশ্বে মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে।

খেলছি না বলে বসে নেই। গলফ কোর্সে অনুশীলন করতে না পারলেও ফিটনেস নিয়ে কাজ করছি। বাসাতেই অনেক কাজ করতে পারি। নিয়মিত অনুশীলন করছিলাম। বাবা মারা যাওয়ার পর ১০-১২ দিন বন্ধ ছিল অনুশীলন। এরপর আবার শুরু করেছি। এখন যে অনুশীলন করছি তা ইনডোরেই সম্ভব। কিন্তু এর আগে ইনডোরে এই অনুশীলন বেশি করার সুযোগ মিলত না। কারণ, তখন তো ঠিকমতো বাসায় থাকতামই না।

এখন হাতে অবসর অনেক। টেলিভিশনে পিজিএ ট্যুরের খেলাগুলো দেখি। স্বপ্ন দেখি একদিন পিজিএ ট্যুরে খেলব। ররি ম্যাকইলরয়, থমাস জাস্টিনরা খেলছেন সেখানে। আমি সাধারণত জেতার মুহূর্তগুলোই দেখি। ওদের ব্যতিক্রমী শটস দেখি। টিভিতে খবর কম দেখার চেষ্টা করি। কিন্তু তার পরও দেখা হয়ে যায়। গলফের পাশাপাশি ফুটবল খেলা দেখতাম। কিন্তু এখন তো কোনো ম্যাচই হচ্ছে না।

আমি সিনেমা দেখতে ভালোবাসি। বাংলা নাটকও দেখি। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর একটা সিনেমা দেখতেই হবে। বেশি দেখি অনুপ্রেরণামূলক ও হাসির সিনেমা। হঠাৎ করেই লম্বা ছুটি পেয়ে গেলাম। তাই পরিবারকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করি। আমার স্ত্রী অরণি আমার সঙ্গে অনেক সফরেই গেছে। তার পরও পরস্পরকে সেভাবে সময় দিতে পারি না। যখন বের হই, তখন লক্ষ্য থাকে কখন গন্তব্যে পৌঁছাব। হোটেলে পৌঁছেই টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি। ভালো খেললে এক রকম, আর খারাপ খেললে আরেক রকম সময় পার করি। কিন্তু দাম্পত্য জীবনের মুহূর্তগুলো ঠিকঠাক মেলানো যায় না তখন। এখন পরিবারকে সময় দিতে পারছি।

খেলোয়াড়দের জীবনে খারাপ ফর্মের পরই আসে ভালো ফর্ম। আমি সেভাবেই দেখছি এই পরিস্থিতিটাকে। আমি আশাবাদী, করোনাভাইরাস থেকে একদিন মুক্তি পাব আমরা। ফিটনেসের সঙ্গে, প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলার মাঠে সব সময় লড়ছি। এই কঠিন পরিস্থিতিতে যদি সবাই সবাইকে সাহায্য করতে পারি, তাহলেই আমরা দুরূহ সময়টাকে জয় করতে পারব।
ত্রাণ দিয়ে প্রাণ বাঁচানো কঠিন

ত্রাণ দিয়ে প্রাণ বাঁচানো কঠিন


দেশে ক্রমেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের দুশ্চিন্তা অন্তহীন। ঘরে ক্ষুধা, বাইরে করোনা। মানুষ এখন যাবে কোথায়? ক্ষুধার জ্বালা করোনার জ্বালার চেয়েও ভয়ংকর। তাই দেশের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না। কোথাও কোথাও ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভ-মিছিল হচ্ছে। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার সরফদি গ্রামে খাদ্যের দাবিতে সড়কে মানুষের শুয়ে থাকার ঘটনাও ঘটেছে।
অসহায় মানুষের প্রাণ বাঁচাতে ত্রাণ বিতরণে হয়েছে দুর্নীতি। দেশের বিভিন্ন স্থানে মজুত রাখা সরকারি চাল জব্দ করার ঘটনাও নেহাত কম নয়। আবার যেখানে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে, সেখানে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। কোনোভাবেই সামাজিক দূরত্ব ঠিক রাখা যাচ্ছে না। ফলে করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।করোনার এমন সংকটকালে অসহায় মানুষকে সহায়তার পুরোনো পদ্ধতি পাল্টানোর সময় এসেছে। শুধু ত্রাণ দিয়ে মানুষের প্রাণ বাঁচানো কঠিন হবে। এ জন্য চায় নগদ টাকা। দেশে চার কোটির বেশি পরিবার আছে। এর মধ্যে অন্তত দুই কোটি দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারকে কয়েক মাসের জন্য ভাতার আওতায় আনতে হবে।
চার সদস্যের পরিবারের ভাতা হতে পারে ছয় হাজার টাকা। আর ছয় সদস্যের পরিবারের ভাতা আট হাজার টাকা। এর চেয়ে বেশি সদস্য থাকলে সর্বোচ্চ ভাতা ১০ হাজার টাকা হতে পারে। যাতে এই দুর্যোগের মুহূর্তে কোনোমতে খেয়েপরে বাঁচতে পারে মানুষ। দুই কোটি পরিবারকে গড়ে আট হাজার টাকা করে দিলে মাসে সরকারের ব্যয় দাঁড়ায় ১৬ হাজার কোটি টাকা।
এই বিপুল পরিমাণ অর্থ জোগানের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ‘করোনা তহবিল’ গঠন করতে হবে। দেশের শীর্ষ শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও ধনী শ্রেণির মানুষকে সেই তহবিলে টাকা দিতে হবে। সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতনের একটি অংশ বাধ্যতামূলক করোনা তহবিলে জমা নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের একটি অংশ করোনা তহবিলে হস্তান্তর করা যেতে পারে। এরপরও অর্থের জোগান না হলে বিদেশি সহায়তায় ঋণ নিতে হবে। ভাতার অর্থ দিতে হবে মোবাইল ফোনে। আর এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে দেশের মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, রকেট, নগদের মতো প্রতিষ্ঠানকে চার্জমুক্ত টাকা উত্তোলনের সেবা দিতে বাধ্য করতে হবে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, এত অল্প সময়ে গরিব পরিবারের তালিকা করা সম্ভব? অবশ্যই সম্ভব। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা প্রতিটি দরিদ্র পরিবারের খবর জানেন। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন নজরদারি করলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে প্রকৃত দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারের তালিকা দ্রুত প্রস্তুত করা সম্ভব। ভাতার টাকা পৌঁছানো গেলে তাদের ঘরবন্দী রাখা অনেকটা সহজ হবে। তখন শহর, গ্রাম, পাড়া-মহল্লায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। ক্ষুধা বা রোজগারের অজুহাত দিয়ে কারও বাড়ি থেকে বের হওয়ার সুযোগ থাকবে না। জরুরি খাদ্যদ্রব্য ক্রয় ছাড়া কাউকে আর বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়া যাবে না।
অল্প সময়ের জন্য ত্রাণ দিয়ে মানুষের প্রাণ বাঁচানো যায়। কিন্তু দীর্ঘকালীন সংকট মোকাবিলায় নগদ অর্থের বিকল্প নেই। কেননা বাঁচার জন্য ত্রাণ ছাড়াও আনুষঙ্গিক অনেক কিছুর দরকার হয়। হাতে টাকা না থাকলে সেই দরকার মেটানোর জন্য মানুষ চুরি বা ছিনতাইয়ের আশ্রয় নিতে পারে। এরপরও যদি আশপাশের বিত্তবান ব্যক্তি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ত্রাণ দিতে চায়, সে ক্ষেত্রে তা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিতে হবে। তবে মূল সহায়তা হওয়া জরুরি সরকারি উদ্যোগে নগদ টাকার মাধ্যমে।
সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়নে সব পেশার মানুষকে মানবিকভাবে এগিয়ে আসা জরুরি। সরকারও এগিয়ে এসে ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ব্যাংকারদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। করোনার রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও নার্সদের প্রণোদনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের কথা না হয় বাদই থাকল। করোনাকালে দায়িত্বরত সেনা, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, গ্রাম পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী, জরুরি বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসসংশ্লিষ্ট পেশার মানুষ বিশেষ প্রণোদনা কি আশা করতে পারেন না?
কঠিন এ সময়ে বাবাকে হারালেন ইমরুল

কঠিন এ সময়ে বাবাকে হারালেন ইমরুল


সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ায় হাসপাতাল ভর্তি করা হয়েছিল ক্রিকেটার ইমরুল কায়েসের বাবাকে। সেই হাসপাতাল থেকে আর বাড়ি ফেরা হলো না।
ক্রিকেটার ইমরুল কায়েসের বাবা মোহাম্মদ বানি আমীন আর নেই। আজ রাতে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পৃথিবী ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন তিনি। মৃত্যুকালে ইমরুলের বাবার বয়স ছিল ৬০ বছর।মাসখানেক ধরেই অসুস্থ ছিলেন ইমরুলের বাবা। গত মাসে মেহেরপুরে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন তিনি। এরপর থেকেই হাসপাতালে। প্রায় এক মাস নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ছিলেন। মাঝে কিছুটা সুস্থও হয়ে উঠেছিলেন। যখন বাসায় আনার চিন্তা, তখন আবার অবস্থার অবনতি হয়। আজ চলেই গেলেন।গত এক মাস ইমরুলকে করোনার মধ্যে ঝুঁকি নিয়েই নিয়মিত হাসপাতালকে বাসা বানাতে হয়েছে। তবুও বাঁচানো গেল না বাবাকে।
ইমরুলের বাবার মৃত্যুতে ফেসবুকে পোস্টের মাধ্যমে শোকপ্রকাশ করেছেন করেছেন তার সতীর্থরা।
মোবাইলে হাজার টাকা উত্তোলনে মাসে একবার মাশুল মওকুফ

মোবাইলে হাজার টাকা উত্তোলনে মাসে একবার মাশুল মওকুফ

প্রতীকী ছবি: এএফপিদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ১৯ মার্চ দিনে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা উত্তোলনে মাশুল না কাটার নির্দেশনা দেয় মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলোকে। কিন্তু তাতে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানগুলো। এ কারণে তারা প্রতিদিনের বদলে মাসে একবার এক হাজার টাকা উত্তোলনে মাশুল মওকুফ সুবিধা দিচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ও এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর তা পরিপালন না করা নিয়ে গ্রাহকের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে পরামর্শ করেই তারা মাসে একবার এক হাজার টাকা উত্তোলনে মাশুল মওকুফ করেছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন পর্যন্ত আগের নির্দেশনা প্রত্যাহার করেনি, আবার নতুন করে কোনো নির্দেশনাও দেয়নি।
করোনার প্রকোপ শুরুর পর এমএফএসের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা বেড়েছে। জরুরি কেনাকাটা থেকে শুরু করে টাকা পাঠানো, বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জসহ বিভিন্ন ধরনের আর্থিক লেনদেনে বিকাশ, নগদ, রকেটের ব্যবহার বেড়েছে। তবে রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকা লকডাউন থাকায় কমে গেছে কেনাকাটা ও বিল পরিশোধ। ফলে লেনদেন আগের চেয়ে কিছুটা কমে গেছে।
গত ১৯ মার্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়, বিকাশ-রকেটের মতো এমএফএস সেবা ব্যবহার করে জরুরি ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটায় কোনো মাশুল কাটা যাবে না। পাশাপাশি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে প্রতি মাসের লেনদেনের সীমা ৭৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা হয়। একই সঙ্গে দিনে একবার ১ হাজার টাকা উত্তোলনে কোনো মাশুল না কাটার নির্দেশনা দেওয়া হয়। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় এবং ওষুধ বিক্রয়কারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত ব্যাংক, এমএফএস, এজেন্ট ব্যাংকিং ও পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) হিসাবকে ব্যবসায়িক লেনদেনে ব্যবহার করা যাবে বলে জানানো হয়।
এদিকে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মানতে গিয়ে তারা বড় ধরনের লোকসানে পড়ে। এজেন্টরা প্রতি লেনদেনের ভিত্তিতে কমিশন পায়। দেখা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই সিদ্ধান্ত আসার পর যেখানে ১০ হাজার টাকা একবারে উত্তোলন করা সম্ভব ছিল, সেটি না করে ১০ বারে উত্তোলন করছে। এতে লেনদেন সংখ্যা এক দিনেই কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এ অবস্থায় প্রতি লেনদেনের ভিত্তিতে এজেন্টদের কমিশন দিতে গেলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। তাই দিনের পরিবর্তে মাসে একবার ১ হাজার টাকা উত্তোলনে মাশুল না কাটার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।
দেশের শীর্ষ এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশ একটি হিসাব থেকে মাসে শুধু একবার ১ হাজার টাকা উত্তোলনে কোনো মাশুল নিচ্ছে না। আর জরুরি কেনাকাটার জন্য ৫০০ টাকা লেনদেন বিনা মাশুলে করার সুযোগ দিয়েছে। বর্তমানে বিকাশ থেকে ১ হাজার টাকা উত্তোলনে সাড়ে ১৮ টাকা মাশুল কাটা হয়। বর্তমানে বিকাশে দিনে ৭৫০ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে।

জানতে চাইলে বিকাশের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিনা মাশুলে দিনে ১ হাজার টাকা উত্তোলনের সুযোগ দিতে গিয়ে আমাদের বড় লোকসান হচ্ছিল। কারণ, গ্রাহকের কাছ থেকে মাশুল না নিলেও প্রতি লেনদেনের জন্য এজেন্ট ও মোবাইল অপারেটরদের ঠিকই টাকা দিতে হচ্ছে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে পরে তা দিনের পরিবর্তে মাসে একবার করা হয়েছে।
ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের এমএফএস রকেটও মাসে একবার ১ হাজার টাকা উত্তোলনে মাশুল মওকুফ করেছে। রকেটে ১ হাজার টাকা উত্তোলনে সাড়ে ১৮ টাকা মাশুল কাটা হয়।
জানতে চাইলে ডাচ্​-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কাশেম মো. শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে, সেভাবেই মাশুল কাটা হচ্ছে। এর কোনো ব্যত্যয় হয়নি।
সারা দেশে ২ কোটি ৭০ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে। দেশজুড়ে এ সেবা দিতে রয়েছে প্রায় ১০ লাখ এজেন্ট। করোনার আগে দৈনিক প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা লেনদেন হতো এ সেবায়। শীর্ষে রয়েছে বিকাশ, এরপরই ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের রকেট।

করোনার চিকিৎসা থেকে বেরিয়ে আসছে নতুন তথ্য

করোনার চিকিৎসা থেকে বেরিয়ে আসছে নতুন তথ্য


গত সপ্তাহে প্রথম আলোয় করোনাভাইরাস চিকিৎসার জটিলতা নিয়ে লিখেছিলাম। গত এক সপ্তাহের মধ্যে ঘটে গেল অনেক ঘটনা, জানা গেল অনেক নতুন তথ্য। পাওয়া গেল আশার নতুন আলো।

বড় খবর হলো, কোভিড-১৯–এর মৃত রোগীদের পোস্টমর্টেম বা শবব্যবচ্ছেদ থেকে জানা গেল অনেক তথ্য, ভুল প্রমাণিত হলো আমাদের অনেক ধারণা। আমাদের ধারণা ছিল Cytokine storm বা ফুসফুস থেকে তৈরি পদার্থ ফুসফুসকে ধ্বংস করছে। এখন আমেরিকা ও ইউরোপের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ব্লাড ক্লটের (embolism) কারণে শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই তথ্যের ফলে করোনা-১৯–এর চিকিৎসার পদ্ধতি ও কৌশল বদলে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।প্রাপ্ত নতুন তথ্যের ভিত্তিতে এখন ধারণা করা হচ্ছে, করোনাভাইরাস রক্তের হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে আটকে থাকে, এ কারণে অক্সিজেন হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে আটকাতে পারে না। এ জন্যই শ্বাসকষ্ট হয়। আর সে কারণেই উচ্চমাত্রায় অক্সিজেন দিলে উপকার পাওয়া যাচ্ছে। আরও বলা হচ্ছে, যাদের থ্যালাসেমিয়া (যা একধরনের রক্তের সমস্যা) রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিনের প্রোটিন পরিবর্তিত হওয়ার কারণে করোনাভাইরাস হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না।

এর উদাহরণ হিসেবে বলা হচ্ছে, দক্ষিণ ইতালির একটি ছোট্ট শহর, সেখানে বহু লোকের এই থ্যালাসেমিয়ার সমস্যা আছে, সেখানে করোনার সংক্রমণ নেই। বাংলাদেশের অনেক মানুষের এই থ্যালাসেমিয়ার সমস্যা আছে। এর ফলে বাংলাদেশের বহু লোক এই রোগের সংক্রমণ থেকে অব্যাহতি পাবে। আরও ধারণা করা হচ্ছে, যাঁরা সমুদ্র থেকে অনেক উঁচুতে থাকেন (যেমন নেপাল), সেখানে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেশি থাকায় তাঁদের এই ভাইরাসের সংক্রমণ অনেক কম হবে। নতুন এই তথ্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে, যেসব ওষুধ এই ভাইরাসকে রক্তের সঙ্গে আটকাতে প্রতিরোধ করে (যেমন: Hydroxyclochloriquine, zinc sulphate, ascorbic acid বা ভিটামিন সি), এই রোগ প্রতিরোধে তা কার্যকর হতে পারে।

হার্ভার্ড থেকে প্রকাশিত নামকরা মেডিকেল পত্রিকা নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বহুল আলোচিত ওষুধ Hydroxycholoquine কার্যকর নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রে ভালোর চেয়ে ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছে। ২৩ জন মারাত্মকভাবে আক্রান্ত কোভিড-১৯ রোগীর ওপর পরিচালিত পরীক্ষার পরে এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এ খবর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে এই কারণে যে এই মুহূর্তে আমরা বহু রোগীকে এই ওষুধ দিয়ে নিরাময়ের চেষ্টা করছি। অনুমান করা হচ্ছে এই রোগ প্রতিরোধে প্রাথমিক পর্যায়ে Hydroxycholoquine কার্যকর হতে পারে। কিন্তু ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে তা আর কার্যকর হয় না। এই মুহূর্তে শতাধিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে এই ওষুধের কার্যকারিতা নির্ধারণ করার জন্য। খুব শিগগির এর ফলাফল আমরা জানতে পারব।

এই সপ্তাহের বড় সুখবর হলো রেমডেসিভির নামের একটি ওষুধ এই রোগের নিরাময়ে কার্যকর বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। শিকাগোতে এই ওষুধ ব্যবহার করে ভালো হয়ে গেছে বেশ কিছু করোনা রোগী। এই ওষুধটির ব্যাপারে চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা আগে থেকেই আশাবাদী ছিলেন। সীমিত আকারে হলেও এখন প্রমাণ মিলেছে যে এর ব্যবহার করোনাভাইরাসকে দ্রুত মেরে ফেলে। এই তথ্য সত্যি প্রমাণিত হলে বহু রোগীকে এর প্রয়োগের মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব হবে।

শেষ কথা, কোভিড-১৯–এর চিকিৎসা–কৌশল বিতর্কিত এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল। নতুন কিছু পরীক্ষামূলক চিকিৎসা শুরু হচ্ছে। এর অন্যতম হলো এক্সচেঞ্জ ট্রান্সফিউশন, যার মাধ্যমে রক্তের ভাইরাসযুক্ত হিমোগ্লোবিন বের করে দিয়ে নতুন রক্ত দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই পদ্ধতিতে দ্রুত ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা জানা যাবে খুব শিগগির।

সবশেষে, সুস্থ হয়ে যাওয়া রোগীদের রক্ত থেকে নেওয়া অ্যান্টিবডি (ইমিউনোগ্লোবিন) দেওয়া হচ্ছে মৃত্যুপথযাত্রী রোগীদের ক্ষেত্রে। এর ব্যবহার এখনো সীমিত, কারণ এটা ব্যাপকভাবে ব্যবহারের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। এই মুহূর্তে সব ওষুধই পরীক্ষামূলক ও প্রশ্নসাপেক্ষ। তবে সঠিক ওষুধ কোনটি, সে তথ্য প্রকাশিত হওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার।
কেমন চলছে অনলাইনে পড়ালেখা

কেমন চলছে অনলাইনে পড়ালেখা


আমাদের দেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য অভিজ্ঞতাটা নতুন বলা চলে। করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে সরকারি নির্দেশনায় বন্ধ আছে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাই অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

ফেসবুক গ্রুপ থেকে শুরু করে গুগল ক্লাসরুম, জুম, ফেসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, হ্যাং–আউট নানা কিছুর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন শিক্ষকেরা। শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা কেমন, জানতে মুঠোফোনে ও মেসেঞ্জারের মাধ্যমে আমরা কথা বলেছিলাম বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পাওয়া গেল মিশ্র প্রতিক্রিয়া।ক্যাম্পাস বন্ধের কিছুদিন পরই অনলাইন পাঠদান শুরু করেছেন ঢাকার সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির বেশ কয়েকজন শিক্ষক। গুগল ক্লাসরুম ও হ্যাং–আউটের মাধ্যমে অনেক শিক্ষক অনলাইনে পড়াচ্ছেন। উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র সাজিদ ইমতিয়াজ বলেন, ‘আমরা যাঁরা মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আছি, তাঁরা অনেকেই একসঙ্গে চাকরি ও পড়াশোনা করছি। এর মধ্যে করোনার কারণে সেশন জটের সৃষ্টি হলে আমাদের কর্মজীবন আর শিক্ষাজীবন দুটোতেই ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। কিন্তু অনলাইনে ক্লাস হওয়ার কারণে সেই দুশ্চিন্তা কিছুটা কমেছে।’

অনলাইনে ক্লাসের অভিজ্ঞতা জানতে চাওয়া হয়েছিল ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র মুনতাসির লিমনের কাছে। কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের দশম সেমিস্টারের এই ছাত্র জানান, নিয়মিত অনলাইনে তাঁদের তত্ত্বীয় ক্লাসগুলো হচ্ছে। লাইভ ও আগে থেকে ধারণ করা ভিডিওর মাধ্যমে ক্লাস করছেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে ক্লাস করার তুলনায় অনলাইন ক্লাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা কম বলে জানান তিনি। তবে যেহেতু সরাসরি ও ধারণ করা ভিডিওগুলো অনলাইনে থাকে, তাই কেউ নির্ধারিত সময়ে ক্লাস করতে না পারলেও পরে ভিডিওতে পুরো লেকচার দেখে নিতে পারে।

ইন্টারনেটের ধীরগতি কিংবা উচ্চমূল্যের কারণে ক্লাসের সঙ্গে তাল মেলাতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, এমন অভিজ্ঞতার কথাও বললেন কেউ কেউ। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নাজমুস সাকিব বলেন, ‘আমার বন্ধুদের মধ্যে অনেকের বাড়ি এমন প্রত্যন্ত এলাকায়, যেখানে ঘরে ঠিকমতো মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কই থাকে না, দ্রুতগতির ইন্টারনেট তো সেখানে কল্পনাতীত ব্যাপার। তাই বাধ্য হয়েই তারা ঘর থেকে বেরিয়ে মাঠে বসে ক্লাসে করছে। বাইরে এসেও মাঝেমধ্যেই তাদের সংযোগ কেটে যায়। ফলে লেকচারের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো মিস করছে অনেকে।’

ইন্টারনেটের উচ্চমূল্য নিয়ে আফসোসের কথা বললেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী শবনম মোস্তারী। তিনি জানান, এক গিগাবাইট ইন্টারনেট প্যাকেজ দিয়ে সর্বোচ্চ দুটি অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন তিনি। ফলে গড়ে প্রতিদিন দু–তিনটি ক্লাসের জন্য প্রায় এক থেকে দেড় গিগাবাইট ইন্টারনেট কিনতে হয় তাঁকে। তাঁর মতে, প্রতিদিন এক থেকে দেড় গিগাবাইট ইন্টারনেটের প্যাকেজ কেনা অনেকের জন্য বেশ ব্যয়বহুল। শবনম যোগ করলেন, ‘ইন্টারনেটের প্যাকেজ কিনতে হলে ফোনে টাকা ভরতে হয়। দেখা যায় একসঙ্গে অনেক টাকা ভরে রাখলে ইন্টারনেট প্যাকেজ শেষ হয়ে গেলে ফোনের টাকাও শেষ হয়ে যায়। তখন আবার টাকা ভরার জন্য বাসা থেকে বেরোতে হয়। মোবাইল ফোন সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি আমাদের জন্য এই সময়ে একটা সহজ কোনো পদ্ধতি রাখত, তাহলে ভালো হতো।’

এদিকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্রী মাহলাকা মুর্শেদ বলেন, করোনা–আতঙ্কের মধ্যে অনলাইনে ক্লাস বা পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ছিলেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা তো আছেই। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা বিবেচনা করে অনলাইন ক্লাস বন্ধ রেখেছে অধিকাংশ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও।
কণ্ঠশিল্পীর কবিতা থেকে গান

কণ্ঠশিল্পীর কবিতা থেকে গান


করোনায় আক্রান্ত হয়ে যখন বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যু বাড়ছে, তখন শঙ্কিত সবাই। এই মহামারির পর যদি জীবন থাকে, কী কী করবেন, তা নিয়ে ভাবছেন অনেকেই। কণ্ঠশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নিও নিজের ভাবনাগুলো লিখে ফেলেছেন কবিতায়। সেটাকে সুরে বেঁধে গান করেছেন তানভীর তারেক।

৮ এপ্রিল ভোরে ‘এবার যদি বেঁচে যাই’ শিরোনামে একটি কবিতা ফেসবুকে পোস্ট করেন কণ্ঠশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নি। কবিতায় নিজের মনের কথাগুলোই তুলে ধরেছেন তিনি। তুলে ধরেছেন ইচ্ছার তালিকা। সেখানে তিনি লিখেছেন, খোলা মাঠে শুয়ে আকাশ দেখার কথা, ফুলের বাগান করার কথা আর প্রতিদিন গলা সাধার কথা। এই শিল্পী প্রথম আলোকে বলেন, ‘গান করি, কিন্তু প্রতিদিন গলা সাধি না। এটা নিয়ে একরকম অপরাধবোধ আছে। কবিতায় যেগুলো লিখেছি, সেসব একেবারেই নিজের একান্ত মনের কথা।’
দিনাত জাহান মুন্নি। ছবি: ফেসবুক থেকে
দিনাত জাহান মুন্নি। ছবি: ফেসবুক থেকে
করোনায় আক্রান্ত হয়ে যখন বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যু বাড়ছে, তখন শঙ্কিত সবাই। এই মহামারির পর যদি জীবন থাকে, কী কী করবেন, তা নিয়ে ভাবছেন অনেকেই। কণ্ঠশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নিও নিজের ভাবনাগুলো লিখে ফেলেছেন কবিতায়। সেটাকে সুরে বেঁধে গান করেছেন তানভীর তারেক।

৮ এপ্রিল ভোরে ‘এবার যদি বেঁচে যাই’ শিরোনামে একটি কবিতা ফেসবুকে পোস্ট করেন কণ্ঠশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নি। কবিতায় নিজের মনের কথাগুলোই তুলে ধরেছেন তিনি। তুলে ধরেছেন ইচ্ছার তালিকা। সেখানে তিনি লিখেছেন, খোলা মাঠে শুয়ে আকাশ দেখার কথা, ফুলের বাগান করার কথা আর প্রতিদিন গলা সাধার কথা। এই শিল্পী প্রথম আলোকে বলেন, ‘গান করি, কিন্তু প্রতিদিন গলা সাধি না। এটা নিয়ে একরকম অপরাধবোধ আছে। কবিতায় যেগুলো লিখেছি, সেসব একেবারেই নিজের একান্ত মনের কথা।’


দিনাত জাহান কবিতাটায় লিখেছেন, ‘এবার যদি বেঁচে যাই/ কান ধরে সরি বলব…/ চিরশত্রুটাকেও মাফ করে দেব… / ভালোবাসি বলব/ ভালোবাসতে বলব/ হাতের তালুতে রেখে ধূলিকণার সুন্দর দেখব/ দেওয়া কথাগুলো রাখব/ না রাখতে পারা কথাগুলো ফিরিয়ে নেব/ সব ঋণ শোধ করে দেব/ আমার কাছে থাকা সবার ঋণ ক্ষমা করে দেব/ খাঁচার পাখিটাকে মুক্ত করে দেব/ এবার যদি বেঁচে যাই...আরও কত কিছু করব।’

একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া গীতিকার কবির বকুলের স্ত্রী দিনাত জাহান। তিনি বলেন, ‘আমার লেখার হাত নাকি ভালো, বকুল আমাকে ছাত্রজীবন থেকেই সেটা বলত। নিয়মিত লেখার জন্য তাগাদা দিত। গান করতে গিয়ে লেখার অবকাশ পেতাম না। করোনায় গৃহবন্দী হয়ে নানা ভাবনা ও দুশ্চিন্তা উঁকি দিচ্ছে মাথায়। সে কারণেই এটা লিখে আমি ফেসবুকে পোস্ট করি। সবাই যে এত প্রশংসা করবে, আমি সেটা ভাবতে পারিনি।’মুন্নির কবিতাটির প্রশংসা করেছেন অনেকে। কেউ আবার মন্তব্য করেছেন সেই পোস্টে। সেই তালিকায় আছেন কবি ও সাংবাদিক আনিসুল হক, অভিনেত্রী ও সাংসদ সুবর্ণা মুস্তাফা, নির্মাতা কাউসার চৌধুরী। মুন্নি জানান, তপন চৌধুরী থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় শিল্পী লেখাটির প্রশংসা করেছেন।

মুন্নির কবিতাটি আবৃত্তি করে একটি ভিডিও বানিয়ে ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন নকশাকার বিপ্লব সাহা। তবে মূল কবিতাটিকে সুর করে গান করেছেন তানভীর তারেক। এমনকি গানের কথাগুলোর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কিছু স্থিরচিত্র ব্যবহার করে একটি ভিডিওচিত্র নির্মাণ করে প্রকাশ করেছেন তিনি। গানটি ফেসবুকে প্রকাশের সময় তিনি লেখেন, ‘ফেসবুকে মৃত্যুসংখ্যা আর ভয়াল সব স্ট্যাটাস দেখার জন্য দৃঢ় মনোবল নিয়ে নিউজ ফিড দেখতে লাগলাম গিটার হাতে নিয়েই। মুন্নি ভাবির কবিতায় চোখ আটকে গেল। আনমনেই গিটারে গাইতে লাগলাম। ইনস্ট্যান্ট শুধু পিয়ানো আর গিটারে সুরটা বাঁধলাম।’

এদিকে প্রায় একই রকম ভাবধারার একটি কবিতা লিখেছেন সহস্র সুমন নামের এক তরুণ কবি। করোনাকালের শপথের মতো করে জনপ্রিয় ২১ জন প্রবাসী শিল্পী সেই কবিতার পঙ্‌ক্তি কণ্ঠে তুলে নিয়েছেন। নিজ নিজ ঘর থেকে ভিডিও ধারণ করে তাঁরা সেটি প্রকাশ করেছেন। সেই কবিতায়ও বলা হয়েছে, ‘এ যাত্রায় বেঁচে গেলে, ভীষণ করে বাঁচব/ সবাইকে জড়িয়ে ধরে, অনেক করে কাঁদব/ এ যাত্রায় রেহাই যদি পাই, অন্যের কথা ভাবব/ যার যেখানে অংশ আছে, হিসাবগুলো চুকিয়ে দেব...।’

কবিতাটি দিয়ে তৈরি ভিডিওতে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশের একসময়ের টেলিভিশন তারকা তানিয়া আহমেদ, মোনালিসা, রুমানা, জামাল উদ্দিন হোসেন, মিলা হোসেন, শামীম শাহেদ, শিরিন বকুল, শ্রাবন্তী, কাজী উৎপল, তমালিকা কর্মকার, ডলি জহুর, শামসুল আলম, প্রিয়া ডায়েস, মহসিন রেজা, হিল্লোল, আফরোজা বানু, নওশীন নাহরিন মৌ, খাইরুল ইসলাম পাখি, রওশন আরা, টনি ডায়েস ও লুৎফুন নাহার লতাকে। নওশীন নাহরিনের পরিকল্পনায় ভিডিওটি তৈরি করেছেন টনি ডায়েস। করোনা–সংকটে সম্মুখযোদ্ধাদের এ প্রযোজনা উৎসর্গ করা হয়েছে।